১৯০০ সালের শুরুর কথা। বগুড়া জেলার সাব-রেজিস্টার ছিলেন বাবু পেরিলাল মজুমদার। যিনি কাহালু এলাকার জমিদারি কিনে নাম ধারণ করেন জমিদার পেরিলাল মজুমদার। তার দিঘীর উত্তর পূর্ব কোণে বটবৃক্ষের ছায়ায় মাত্র একজন শিক্ষক নিয়ে পাঠশালা স্থাপন করেন। ক্রমাম্বয়ে এই পাঠশালায় ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হতে থাকে। ১৮৯৭ সালে সান্তাহার-বোনারপাড়া রেললাইন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয় এং ১৯১০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে রেল চালু হয়। এই সময়েই Dl of School বগুড়া, এই বিদ্যালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শ করে ৫ম শ্রেণি পযন্ত পাঠদানের অনুমতি প্রদান করেন। বিদ্যালয়টি District Board এর আওতায় M.F.P. স্কুল নাম ধারণ করে।
১৯১৬ সালের কথা, এক ভয়াল রাত্রিতে ডাকাত দলের হাতে জমিদার পেরিলাল মজুমদার নিহত হলে তার একমাত্র পুত্র কুমুদরঞ্জন মজুমদার জমিদারি গ্রহণ করেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে M.E স্কুলে রুপান্তর করার জন্য মরহুম তশরতুল্যা কবিরাজ সাহেবকে সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করেন। ১৯২০ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি M.E স্কুলের অনুমতি পায়। তদানিন্তন সময়ে কাহালু থানার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেখান হতে অত্র এলাকার কৃতিসন্তানেরা Entrance পাশ করে।
এরপর প্রতিষ্ঠানটি যারা দেখাশোন করে, লালন-পালন করেছেন তাঁদের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই। বাবু কালিপদ মজুমদার মরহুম তশরতুল্যা কবিরাজ, মরহুম ছমির উদ্দিন খান, মরহুম ডাঃ মালেক উদ্দিন, মরহুম ছটু সোনার, মরহুম দলিল উদ্দিন, মরহুম রমজান আলী, মরহুম ছিফাতুল্যা প্রাং, মরহুম মুহাম্মদ আলী কবিরাজ, মরহুম রিয়াতুল্যা সরদার ও জনাব আব্দুস সামাদ খন্দকার আরও অনেকে যাদের নাম এই মুহূর্তে আমাদের স্মরণ না থাকলেও সকল বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
১৯৪০ সালের কথা, জমিদার কালিপদ মজুমদার ও মরহুম তশরতুল্যাহ কবিরাজের নেতৃত্ব ৯ম ও ১০ম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। মরহুম ডাঃ রইছ উদ্দিন সাহেব বি.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে আখুঞ্জা গ্রামের বাড়িতে আসেন এবং ফল প্রত্যাশী বিদ্যানুরাগী ফলাফল প্রকাশের পূর্ব সময় কালিন অত্র বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির পাঠদানের অনুমতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করেন।১৯৪৪ সাল হতে অত্র বিদ্যালয় ১০ম শ্রেণি পযন্ত অর্থাৎ–কাহালু উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত কাহালু থানায় একমাত্র বিদ্যাপীঠ কাহালু উচ্চ বিদ্যালয়, যে প্রতিষ্ঠান থেকে অত্র এলাকার কৃতিসন্তানেরা ম্যাট্রিক পাশ করেছেন। অত্র এলাকার জন্য সাধারণ এই প্রতিষ্ঠানে কিছু জমি দান করেছেন এবং প্রতিষ্ঠান হতে কিছু জমি ক্রয় করা হয়েছে। বাবু কালিপদ মজুমদার বিদ্যালয় সংলগ্ন দিঘীটি দান করেছেন।
আজ বিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ১০০০। শিক্ষক সংখ্যা ১৯, কর্মচারী সংখ্যা ৪ জন অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে S.S.C পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠান ৮ম স্থান লাভ করেছে। ২০১৫ সালে এসএসসি–তে শতভাগ পাশ করেছে এবং ফলাফলের ভিত্তিতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক দুইবার ১ লক্ষ টাকা করে উদ্দীপনা পুরস্কার পেয়েছে। সেই সাথে বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।
২০০৯ সাল থেকে বিদ্যালয়টি আধুনিকায়ণ ও অবকাঠামো এবং শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং বিদ্যালয়টি ২১মে ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয় সেই সাথে বিদ্যালয়টি কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বিদ্যালয়টি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সভাপতি, কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
কাহালু, বগুড়া।
মোঃ ফেরদৌস আলী সেখ
সহকারী প্রধান শিক্ষক
কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
কাহালু, বগুড়া।